৩রা জুন, ২০২৩ ইং | ২০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা চৌধুরী

প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল - ২৪ - ২০১৭ | ৮: ৫৫ অপরাহ্ণ | সংবাদটি 1949 বার পঠিত

মরমী কবি হাছন রাজার পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে যে কজন প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তার মধ্যে  বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে লেফট্যানেন্ট কর্ণেল পদে কর্মরত দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা চৌধুরী অন্যতম ।
মরমী কবি হাছন রাজার পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে যে কজন প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তার মধ্যে দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা চৌধুরী অন্যতম । তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে লেফট্যানেন্ট কর্ণেল পদে কর্মরত আছেন। দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা চৌধুরী ১৯৬৭ সালের ১৫ অক্টোবর তারিখে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম দেওয়ান তালেবুর রাজা চৌধুরী এবং মায়ের নাম সৈয়দা মিনা রাজা । তাছাওয়ার রাজার পিতা দেওয়ান তালেবুর রাজা ছিলেন ভারতের আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ.ও এল.এল.বি ডিগ্রী প্রাপ্ত একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ।
মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা চৌধুরী  সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ব্লুবার্ড স্কুল থেকে টেলেন্টপুলে বৃত্তি সহ প্রাথমিক শিক্ষা, সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে  ১৯৮৪ সালে প্রথম বিভাগে এস.এস.সি এবং  ১৯৮৬ সালে স্টার মার্ক সহ   এইচ.এস.সি পাশ করেন। তিনি ক্যাডেট কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে তিতুমীর হাউজে প্রিফেক্ট নির্বাচিত হন।   পরবর্তীতে  তিনি ১৯৮৯ সালে  চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  থেকে দ্বিতীয় বিভাগে বি.এস.সি এবং ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  মাস্টার্স ডিগ্রী এবং ২০০৪ সালে  পাকিস্তানের বালুচিস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  পুনরায় মাস্টার্স (ওয়ার ফেয়ার ) ডিগ্রী অর্জন করেন।
কর্মজীবনে  শুরুতে ১৯৮৯ সালে  তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট পদে যোগদিয়ে কর্মজীবনের যাত্রা শুরু করেন। কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে চাকরী জীবন শুরু করে ইতোমধ্যে তিনি রাজশাহী ,রাঙ্গামাটি ,রংপুর .চট্রগ্রাাম ,ঢাকা ,ময়মনসিংহ , দিনাজপুর ,যশোর, বগুড়া, এবং নিজ জেলা সিলেটে কর্মরত ছিলেন। চাকরী জীবনে দেশের গন্ডি পেরিয়ে তিনি কুয়েত,ইরাক , চীন ,যুক্তরাষ্ট্র ,মালয়েশিয়া, ও পাকি¯তানে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রায় দুই যুগের ও বেশী সময় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই চৌকস সেনা কর্মকর্তা ইতোমধ্যে” জাতিসংঘ শান্তিপদক ’’ ও দুই দুইবার পিএসসি উপাধি লাভ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে একজন দক্ষ রণকৌশল বিভাগের  প্রশিক্ষক হিসেবে তার প্রচুর সুনাম রয়েছে ।  এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাজোয়া ইউনিটে ,বগুড়ায় আমার স্কুলে প্রশিক্ষক হিসেবে ,সিলেটে এস আই এন্ডটি তে রণ কৌশল শাখার প্রশিক্ষক হিসেবে এবং সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । তার অধিনায়কত্বে ১২ লান্সার (সাজোয়া ইউনিট )২০০৮ সালে ফরমেন শ্রেষ্ট ইউনিট ট্রফি অর্জন করেন । বর্তমানে তিনি সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজে প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন।
দেওয়ান মোহাম্মদ  তাছাওয়ার রাজা তার পূর্ব পুরুষের মতই একজন সৌখিন মানুষ । আর তাই শখের বশে সিলেট শহরে নিজ পৈত্রিক ভিটায় তার পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি রক্ষার্থে গড়ে তুলেছেন ”মিউজিয়াম অব রাজাস”যা সিলেটের ইতিহাসে এক অনন্য সংযোজন । এদিকে   তার তার  পূর্ব পুরুষ মরমি কবি ও জমিদার হাছন রাজা ও খান বাহাদুর, কাব্য বিশারদ দেওয়ান একলিমুর রাজা  সংক্রান্ত দলিলপত্র ,বই গান রচনা ইত্যাদি সংগ্রহ ও গবেষনা করা এবং হাছন রাজার প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত গানের সম্বনয়ে এবং হাছন রাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন রকম অজানা তথ্য নিয়ে হাছন রাজা সমগ্র শিরোনামে একটি ৮৫০ পৃষ্টার তথ্যবহুল বই ২০০০সালে ও ২০০৯সালে (পুণ:মুদ্রণ )প্রকাশ করেছেন । বর্তমানে কাব্যবিশারদ একলিমুর রাজা সমগ্র শিরোনামে আরেকটি বই প্রকাশের কাজ চলছে । এছাড়া তিনি ২০১০ সালে জেনারেল এম.এ জি ওসমানির জীবন ও কর্ম নিয়ে ও জেনারেল মাই জেনারেল শীর্ষক বই এবং সেনাবাহিনীর সাজোয়া কোরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত বই বাংলাদেশ আর্মড কোর প্রকাশ করেন । পেশাগত দায়িত্ব পালন উপলক্ষে ও ভ্রমণের উদ্দেশ্য এশিয়া ইউরোপ.আমেরিকা ও আফ্রিকার প্রায় ৫০ টি দেশ ভ্রমণ করেন।দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা একজন ধর্মপ্রান মুসলমান । ১৯৯৬ সালে তিনি পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেছেন এবং ২০০৮ সালে সপরিবারে ওমরাহ পালন করেছেন।

।দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজার দুই বোন রয়েছেন ।বোন দুইজন তার বয়সে বড় ।বড় বোনের নাম ফাতেমা নাহরীন রাজা এল এল বি (ঢাবিঃএবং ছোট বোনের নাম ফাতেমা নাজরীন রাজা বি.এ ।ব্যাক্তিগত উদ্যোগে তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন স্থাপন করেছেন এবং সেগুলোর সাথে  জড়িত আছেন । তার বিশেষ কর্মকান্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তিনি হাছন রাজা ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্টাতা ও সভাপতি ,শিক্ষানুরাগী দেওয়ান তালেবুর রাজা ট্রাস্ট মিউজিয়াম অব রাজাস ও শিক্ষানুরাগী দেওয়ান তালেবুর রাজা স্মৃতি পাঠাগার এর প্রতিষ্টাতা ও প্রধান পৃষ্টপোষক । তিনি ২০০২ সালের শ্রেষ্ট জাতীয় চলচিত্র পুরষ্কার ভূষিত হাছন রাজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পৃক্ত ছিলেন । ১৯৯৯ সালে-২০০০ সালে মরমী কবি হাছন রাজা সম্মানে সরকারী  ভাবে ডাকটিকেট প্রকাশের প্রাথমিক আবেদনকারী এবং হাছন রাজার গানের পান্ডুলিপি .বই ,সিডি ,ছবি ইত্যাদির সংগ্রাহক । তার ঐকান্তিক উদ্যোগে সিলেট ১৯৯৩ সালে ও ঢাকায় ২০০৯ সালে প্রথমবারের মত হাছন রাজা উৎসব এবং ২০১০ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে  প্রথমবারের মত সিলেটে লোকবাদ্য যন্ত্র মেলার আয়োজন করেন ।

দেওয়ান তাছওয়ার রাজার পিতা দেওয়ান তালেবুর রাজা চৌধুরী ছিলেন মরমী কবি দেওয়ান হাছন রাজার পুত্র খান বাহাদুর দেওয়ান একলিমুর রাজার দি¦তীয় পুত্র  ।  আর দেওয়ান তাছওয়ার রাজার মা সৈয়দা মিনা রাজা হলেন হবিগঞ্জের সৈয়দ নাসির উদ্দিন সিপাহসালারের বংশধর বর্তমান কিশোরগঞ্জ বৌলাই এর জমিদার সৈয়দ হাবিবুল হক (প্রাক্তন এম এন এ এবং ওয়াকফ কমিশনার )এর কন্যা। দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা চৌধুরী  ১৯৯৬ সালে ফরিদপুর জেলার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডা:  মোসলেহ উদ্দিন আহমদের একমাত্র কন্যা মোসলেহা মনিরা রাজা এর সঙ্গে বিবাহ বন্দনে আবদ্ব হন । সুখী এই দম্পতি দুই পুত্র ও এক কন্য সন্তানের জনক জননী ।

error: Content is protected !!