১লা জুন, ২০২৩ ইং | ১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথী

প্রকাশিত হয়েছে: ফেব্রুয়ারি - ২৭ - ২০১৮ | ৭: ৫০ অপরাহ্ণ | সংবাদটি 809 বার পঠিত

অনেক কৃতি পুরুষের স্মৃতি বিজড়িত বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের গড়গাঁও গ্রামে ১৯২৭ সালের ডিসেম্ভর মাসে জন্ম গ্রহন করেন মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথী । তার পিতার নাম মৌলভী জাহউয়াত উল্লাহ ।
ছোট বেলা থেকেই আশরাফ আলী ছিলেন তীক্ষন মেধার অধিকারী । নিজ গ্রামের মক্তবেই লেখাপড়ার হাতে খড়ি হয় । পরে বিশ্বনাথের প্রাচীনতম বিদ্যাপিঠ রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় থেকেই শিক্ষা জীবনের সূচনা করেন। এরপর দৌলতপুর ইসলামিয়া মাদ্রাসায় কিতাব বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে সিলেটের রানাপিং ইসলামিয়া মাদ্রাসায় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন । সেখানে তিনি কৃতিত্বের সাথে জামাতে মেসকাত পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন ।এরপর হাদিসে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ভর্তি হন দেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী ইসলামি বিদ্যাপিঠ হাটহাজারি মাদ্রাসায় এবং সেখানেই সর্বোচ্চ শ্রেনী দাওরা হাদিস সমাপ্ত করেন।

গুলমুকাপন মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমেই মরহুম জনাব আশরাফ আলী সাহেবের কর্মজীবনের সূচনা হয়।এছাড়া তিনি তাওয়াক্কুলিয়া মাদ্রাসা ,চককাশিমপুর ইসলামিয়া মাদ্রাসা ,পারকুল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ও শিক্ষকতা করেন ।১৯৫৯ সালের ইলমে দ্বীনের বৃহৎ খেদমতের উদ্দেশ্যে তিনি প্রতিষ্টা করেন জামেয়্া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদ্রাসা বিশ্বনাথ । তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে জামেয়া মাদানিয়য়া বিশ্বনাথ স্বল্প সময়ে পরিণত হয় একটি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এপ্রতিষ্টানের প্রতিষ্টাতা পরিচালক ও শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করেন ।অধ্যপনার পাশাপাশি সামাজিক সংগঠন হিলফুল ফুজুল প্রতিষ্টা মাসিক আল ফারুক সম্পাদনা সহ বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা তার উল্লেখযোগ্য অবদান ।

নেজামে পার্টির দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জনাব আশরাফ আলী সাহেবের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ।১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম প্রতিষ্টার সময়ে তিনি অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন ।শুরুতে তিনি সিলেট জেলার সেক্রেটারী ছিলেন । পরবর্তি সময়ে নির্বাচিত হন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি পদে । এক সময় তিনি নির্বাহি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ।সর্বশেষ ২০০১ সালে মাওলানা আশরাফ আলী দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মনোনিত হন । মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্টা ও সততার সাথে পালন করে গেছেন । এছাড়া ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলন ,আইয়ুব বিরোধি আন্দোলন ,ফতোয়া বিরোধি আন্দোলন ,কাদিয়ানি বিরোধি আন্দোলন সহ আরো অনেক আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন ।

বিশ্বনাথের এই কৃতি সন্তান ২০০৫ সালের ১৮ই এপ্রিল শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হলে সিলেটের একটি ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করানো হয় । প্রাথমিক চিকিৎসার পর অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় ১ শে এপ্রিল ওসমানি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় । অবশেষে ২০ শে এপ্রিল রোজ শুক্রবার সকাল ৮.৩০মিনিটের সময় এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে তিনি চিরবিদায় নেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর । তিনি স্ত্রী ,১১মেয়ে ,৮ ছেলে এবং অসংখ্য ছাত্র ও ভক্ত রেখে গেছেন।

error: Content is protected !!