বিশ্বনাথের আলোকিত নারী ড. মধুশ্রী ভদ্র সরকারী তিতুমীর কলেজ ঢাকাতে উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্বনাথে মায়ের পর যে মেয়েটি পি.এইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করে নিজ পরিবার এবং পিতৃভূমি বিশ্বনাথের মানুষকে গৌরবান্বিত করেছেন তিনি হচ্ছেন ড. মধুশ্রী ভদ্র । বর্তমানে বিশ্বনাথের আলোকিত এই নারী সরকারী তিতুমীর কলেজ ঢাকাতে উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ড. মধুশ্রী ভদ্র ১৯৫১ সালের ১লা আগষ্ট জন্মগ্রহনকারী বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের আকিলপুর গ্রামের প্রখ্যাত জমিদার পিতা শৈলেন্দ্র কুমার চৌধুরী ও মাতা আলোকিত মহিলা ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরী রত্নগর্ভা দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র কন্যা সন্তান । মাতাপিতার সান্নিধ্যে গৃহে বাল্য শিক্ষা শুরু করলে ও মাতাপিতা সরকারী চাকুরীজীবি হবার সুবাদে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা জীবন লাভ করতে হয় ।
তিনি সিলেট সরকারী পাইলট গার্লস হাই স্কুলে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এবং ১৯৬৭সালে ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচচ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করেন । এরপর ১৯৬৯ সালে ঢাকা গভর্ণমেন্ট গার্লস কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে বি.এস. সি (অনার্স) , ১৯৭৩ সালে এম.এস .সি ( বোটানী) এবং ২০০৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ .ডি ডিগ্রী অর্জন করেন । মধুশ্রী ভদ্র অষ্টম শ্রেণীতে টেলেন্ট স্কীম বৃত্তিসহ স্কুল , কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী থাকাকালীন সময়ে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন বৃত্তি লাভ করেন ।এম.এস.সি ডিগ্রী লাভের পর তিনি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগে প্রায় পাঁচ বৎসর কর্মরত ছিলেন। গবেষণা কর্মরতাবস্তায় তিনি পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানীর সাহচর্য লাভ করেন।
তাঁর গবেষণা লব্ধ কয়েকটি প্রবন্ধ দেশি-বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত হলে যার প্রমাণ আমরা দেখতে পাই এশিয়াটিক সোসাইটি সম্পাদিত পুস্তকে।অত:পর তিনি শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হন। ১৯৮২ সালের জানুয়ারী মাসে প্রথম শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজে উদ্ভিদ বিদ্যার লেকচারার হিসেবে।এ কলেজেই তিনি পদোন্নতি লাভ করে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন।ড. মধুশ্রী ভদ্র বোটানী বিষয়ে একাধারে ডিগ্রী , অনার্স ও মাস্টার্স শ্রেণীতে অত্যন্ত সুনিপুণ দক্ষতার সহিত পাঠদান করে ছাত্রছাত্রীদের মন ও মননে অভাবনীয় ভালবাসা অর্জন করতে সক্ষম হন। একজন আর্দশ শিক্ষকের যে সকল গুণাবলী থাকা আবশ্যক যেমন সময়ানুবর্তিতা , পাঠদানে একনিষ্টতা , সুনিপুণ কর্মকুশলতা , মননশীলতা , বিষয়ভিত্তিক অগাধ ও অপরিসীম জ্ঞান , মানবিক মুল্যবোধ , সুমধুর ব্যক্তিত্ব দিয়ে কৃতিত্ব ও সুনামের অধিকারী হন।
ব্যক্তিত্ব দিয়ে কৃতিত্ব ও সুনামের অধিকারী হন। ড. মধুশ্রী ভদ্র বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্য এর ধারক বাহক বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিদ্যার সহকারী অধ্যাপক পদে বদলী হয়ে আসেন। তিনি আনন্দ মোহন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইশ বৎসর শিক্ষাদান করে অনেক শিক্ষার্থীকে আলোকিত করেছেন , যারা আজ স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। এ দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া ও সহযোগি অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে এবং অধ্যাপক পদে হরগঙ্গা কলেজে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিষ্ঠার সহিত দায়িত্ব পালনে সক্ষম হন। ড. মধুশ্রী ভদ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ বোটানিক্যাল সোসাইটি (duaa)এর আজীবন সদস্য। ২০০৭ সালে এসিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত encyclopedia of flora and fauna of Bangladesh এর vol-11 এ তাঁর অনেক গবেষণা কর্ম স্থান পেয়েছে এবং তিনি contributor হিসেবে অবদান রাখেন। মধুশ্রী ভদ্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ বিদ্যা বিষয়ে প্লান্ট প্যাথলজিতে পি.এইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনির অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল , বাংলাদেশ বোটানিক সোসাইটির তিনি একজন সক্রিয় জীবন সদস্য ও বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের কার্যকরী কমিটির সক্রিয় সদস্য। ছাত্র জীবনে তিনি স্কুল , কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ও ক্রীড়াক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রাখেন। ছাত্র জীবনে বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় নিয়মিত গল্প , প্রবন্ধ ও কবিতা লেখেন।
ঈদ সংখ্যা সৈনিক ও দৈনিক জনকণ্ঠের সাহিত্য সাময়িকী ও বিজ্ঞান বিষযক ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত হয়।বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ছাত্রছাত্রীদের অংশ গ্রহণের অনুষ্ঠানে তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করতেন।ড. মধুশ্রী ভদ্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ও মাস্টার্স শ্রেণীর জন্য বাংলাভাষায় “মাইকোলজি” এবং “প্ল্যান্ট প্যাথলজি” নামক দু’টি পাঠ্য পুস্তক রচনা করেছেন , যা ছাত্রছাত্রীদের কাছে বেশ সমাদৃত হয়েছে। এছাড়া তিনি উদ্ভিদ জগত এবং ভেষজ গাছ বিষয়ক গ্রন্থ “ ৪০টি বনৌষধি ও উদ্ভিদের কথকথা উভয় বাংলার প্রকৃতিকে নতুন মাত্রায় উম্মোচিত করেছেন। এছাড়া ও ২০১৫ সালের বই মেলায় প্রকাশিত তাঁর “ ১০০ বনৌষধি “ গ্রন্থটি ও ভেষজ রোগ বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে বলে আমি আশা রাখি। তাঁর রচিত “ মধুর আমার মায়ের হাসি ” ও “ একগুচছ লেখা ” গ্রন্থ দু’টি ও ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে। ড. মধুশ্রী ভদ্র বর্তমানে সরকারী তিতুমীর কলেজ ঢাকাতে উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনির স্বামী প্রফেসর সুনীত কুমার ভদ্র সরকারী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ , তিনি পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর , শিক্ষা মন্ত্রণালয় , ঢাকার যুগ্ন-পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। স্বামীর অনুপ্রেরণায় ড. মধুশ্রী ভদ্র’র এ সকল বিশাল অর্জন সম্ভব হয়েছে। তাঁর দুই সন্তান ডা. মৌসুমী ভদ্র ও সীমন্তী ভদ্র নিয়মিত পত্র পত্রিকায শিশুতোষ গল্প , প্রবন্ধ ও ছড়া লিখেন।২০০৬ সালে শিশু একাডেমী থেকে ডা. মৌসুমী কর্তৃক উপহার নামে একটি গল্পের বই প্রকাশিত হয় এবং তা বেশ পাঠক প্রিয়তা অর্জন করে। তাঁর দুই কন্যা ডা. মৌসুমী ভদ্র ( m.b.b.s)-bcs health cadre এর asstt surgeon হিসেবে কর্মরত ও কনিষ্ঠা কন্যা ডা. সীমন্তী ভদ্র ( b.d.s)ডেন্টাল সার্জন হিসেবে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত। অত্যন্ত আনন্দের বিষয় , যে তারা দুই বোনই মাতামহীর মত ( বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরীর ) পথ ধরে লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত। তাদের তিনটি গল্প গ্রন্থ ( শিশুতোষ):- (১) উপহার (শিশু একাডেমী), (২) রাজুর চোখে জল ( নন্দিতা প্রকাশ) , (৩) পিঙ্কির পুতুল (ঐ) প্রকাশিত হয়েছে ও বইগুলি কিশোর-কিশোরীদের মাঝে দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
কিশোর-কিশোরীদের মাঝে দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ড. মধুশ্রী ভদ্র’র বড় ভাই ডা. শুভাগত চৌধুরী বিশিষ্ট চিকিৎসক , সুলেখক ও ছোট ভাই ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বি.ডি.এস ; পি.এইচ. ডি সুনামখ্যাত দন্ত চিকিৎসক , রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী , “মানস” এর প্রতিষ্ঠাতা ও who এর স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব। বহুবিধ প্রতিভার অধিকারী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ , বিশ্বনাথের সুকীর্তি কন্যা ড. মধুশ্রী ভদ্র উচচ শিক্ষার্জন করে দেশ ও জাতীর কল্যাণে অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তথ্যসূত্র – মিজানুর রহমান মিজান, সাবেক সভাপতি . বিশ্বনাথ প্রেস